বাংলা সাহিত্যজগতে যতিচিহ্ন! প্রয়াত শঙ্খ ঘোষ

বাংলা সাহিত্যজগতে যতিচিহ্ন! প্রয়াত শঙ্খ ঘোষ

করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান কবি শঙ্খ ঘোষ , তাঁর প্রয়ানে শোকস্তব্ধ গোটা সাহিত্য জগৎ।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান কবি শঙ্খ ঘোষ (Sankha Ghosh)। বয় হয়েছিল ৯০ বছর। তাঁর প্রয়ানে শোকস্তব্ধ গোটা সাহিত্য জগৎ। শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বুধবার সকালে বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৯০

বছর। গত ১৪ এপ্রিল থেকে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন নবতিপর কবি। হাসপাতালে অনীহা তাই বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাংলা সাহিত্য মহল।জানা গিয়েছে, গত ১২ এপ্রিল থেকে কবির জ্বর এসেছিল। এছাড়াও একাধিক উপসর্গ থাকায় তাঁর কোভিড পরীক্ষা করানো হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। যদিও তাঁর হাসপাতালে যাওয়ায় আপত্তি ছিল। তাই বাধ্য হয়েই হোম আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেন পরিজনেরা। বাড়িতেই ICU-র পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। এমনিতেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন কবি। তার উপর কোভিডের জেরে শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে আচমকাই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বুধবার ভোর তাঁকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে সকাল ৮টা নাগাদ তাঁর জীবনাবসান ঘটে। গত জানুয়ারি মাসেও তাঁর শারীরিক সমস্যার তৈরি হয়েছিল। তখনও একবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত।তাঁর প্রয়ানে শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, 'শঙ্খবাবু যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ বাবরের প্রার্থনা, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ, ধূম লেগেছে হৃদকমলে, এ আমির আবরণ। জ্ঞানপীঠ, পদ্মভূষণ, দেশিকোত্তম, সাহিত্য অকাদেমি, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারসহ অজস্র সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। শঙ্খবাবুর সঙ্গে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি প্রয়াত শঙ্খ ঘোষের আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।' মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তবে গান স্যালুট পছন্দ ছিল না তাঁর। তাই গান স্যালুট ছাড়াই শোকজ্ঞাপন হবে শেষকৃত্যে। পরিবারের সকলে জানান, নীরবেই যেন তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়, এমনটাই চেয়েছিলেন তিনি। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কবির বাড়িতে

পৌঁছন ফিরহাদ হাকিম ও সাধন পাণ্ডে। শোকপ্রকাশ করা হয়েছে বামফ্রন্টের তরফেও।বাংলা সাহিত্যজগতে দীর্ঘ ছাপ রয়েছে শঙ্খ ঘোষের। কিংবদন্তি এই কবি রচিত ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’, 'জন্মদিনে', 'আড়ালে', 'সবিনয়ে নিবেদন', ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’ কবিতাগুলি কালজ্বয়ী সৃষ্টি। তাঁর সাহিত্য সাধনা এবং জীবনযাপনের মধ্যে বারবার প্রকাশ পেয়েছে তাঁর রাজনৈতিক সত্ত্বা। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে বারবার তাঁকে কলম ধরতে দেখা গিয়েছে। প্রথম সারিয়ে থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নিজস্ব আঙ্গিকে।একসময় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া এবং বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনাও করেছেন শঙ্খ ঘোষ। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তিনি ছিলেন সনামধন্য। দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পান। ১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে বাংলায় ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি অনুবাদ করেও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান শঙ্খ ঘোষ। এছাড়াও রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার।

LEAVE A COMMENT

Comment