আসলেই সমাজের দর্পণ কি সিনেমা '

আসলেই সমাজের দর্পণ কি সিনেমা '

আসলেই সমাজের দর্পণ কি সিনেমা '

অধিকাংশ মানুষই অবসর সময়ে সিনেমা দর্শনের মাধ্যমে বিনোদন লাভে অভ্যস্ত। তাই মানুষের জীবনাচারে সিনেমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক সময় চলচ্চিত্র তথা সিনেমাকে সমাজের দর্পণ বলা হতো। কেননা সিনেমার মাধ্যমে সমাজের নানা সংগতি-অসংগতি, ন্যায়-অন্যায়, আনন্দ-বেদনা ও জীবনাচার সুনিপুণভাবে ফুটে উঠত। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ ও বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনাচার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করা যেত। হয়তো সে কারণেই চালচ্চিত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হতো। কিন্তু বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই ঘটছে তার উল্টো। সমাজে প্রচলিত নয় এমন অশালীন ও বর্বরোচিত দৃশ্য সিনেমায় সংযুক্ত করা হচ্ছে। নোংরা সংলাপ ও অশ্লীল পোশাক ব্যবহার করা হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব দর্শকের মনে। এমন সিনেমা যুবকদের মনে যৌনলিপ্সা জাগ্রত করে। নগ্নতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে অনুপ্রাণিত করে। যুব সমাজের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়।বর্তমানে সিনেমা সমাজের দর্পণ নয়। বরং সিনেমার দর্পণ সমাজ। কেননা চলচ্চিত্রে যা দেখানো হয় সময়ের ব্যবধানে তা সমাজে ফুটে ওঠে। চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকারা যা যা করে আমাদের উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তা অনুসরণ করে। সিনেমায় নায়ক যে স্টাইলে চুল রাখে, যে স্টাইলের পোশাক পরিধান করে কিশোর, যুবকরা সেই স্টাইলে চুল রাখে, সে স্টাইলের পোশাক পরিধান করে। তারা পিতা-মাতা বা শিক্ষকদের আদেশ-নিষেধকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। কিশোরী বা তরুণীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। তারাও নায়িকার সাজসজ্জা ও পোশাককে পূর্ণ অনুসরণ করে।সিনেমায় যা দেখানো হয় তার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে দর্শকদের মনে। তারা যা দেখে সেগুলোকে স্বাভাবিকভাবে মনে নেয়। অনুসরণ ও অনুকরণের চেষ্টা করে। যেমন চলচ্চিত্রে যে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণ শেষে হত্যা, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায়, পরকীয়া, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে খুনের বিষয়গুলো দেখানো হয় তা এক সময় আমাদের সমাজে ছিল না বললেই চলে। লোকজন এগুলো করা তো দূরের কথা, এসব চিন্তা করাকেও পাপ মনে করত। কিন্তু সিনেমায় এমন অশালীন দৃশ্য বেশি বেশি প্রদর্শিত হওয়ার কারণে বর্তমানে আমাদের সমাজে তা অহরহ ঘটছে। তাছাড়া প্রেম কাহিনিনির্ভর সিনেমা দেখতে দেখতে যুব সমাজের অনেকে বিয়ের আগে প্রেম করাকে তাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য মনে করছে। সিনেমা যেহেতু দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে,তাদের জীবনাচারে সিনেমার ছাপ প্রতিফলিত হয়, তাই সিনেমা নির্মাণে অবশ্যই জনকল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশের স্বার্থে সিনেমা হতে হবে অশ্লীল পোশাক, নোংরা ভাষা ও অশালীন নৃত্যমুক্ত, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যনির্ভর ও মানসম্মত। 

পরিচালকদের উচিত, শুধু সাময়িক আনন্দ দান নয়, বরং নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিক্ষামূলক ও ইতিহাসনির্ভর মানসম্মত সিনেমা নির্মাণ করা।

LEAVE A COMMENT

Comment