পাশে পছন্দের স্ত্রী, তবু কেন পরকীয়ায় মত্ত হন পুরুষেরা? চাঞ্চল্যকর উত্তর শুনে অবাক হবেন আপনিও

পাশে পছন্দের স্ত্রী, তবু কেন পরকীয়ায় মত্ত হন পুরুষেরা? চাঞ্চল্যকর উত্তর শুনে অবাক হবেন আপনিও

চাঞ্চল্যকর উত্তর শুনে অবাক হবেন আপনিও!

একটি সুস্থ স্বাভাবিক বৈবাহিক সম্পর্কে(Marriage) থাকার পরেও কেন সঙ্গীর উপর প্রতারণা করেন অপরজন? স্বামী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে(Extra Marital Affair) জড়িয়ে পড়েছেন শুনে কীরকম আঘাত লাগে একজন স্ত্রীর মনে? পরকীয়া করার অন্যতম কারণ কী? এই নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক?আমরা যদি আমাদের চেনা পরিচিত মহলেও তাকাই, সেখানেও দেখা যায়, সম্পর্কের প্রতি খুব তাড়াতাড়ি আস্থা হারাচ্ছেন যুগলরা। সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে। তাঁর অন্যতম কারণ, একজন সঙ্গী অন্যজন সঙ্গীকে প্রতারণা (Cheating on Partner) করছেন বা ঠকাচ্ছেন। বিবাহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হচ্ছে না। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন স্বামী বা স্ত্রী। এখন অনেক মহিলাই এই প্রশ্ন করেন যে, দীর্ঘ বছরের সম্পর্কের পরেও কেন তাঁদের স্বামীরা তাঁদের ঠকাচ্ছেন বা ঘরে সুন্দরী স্ত্রী থাকার পরেও স্বামী অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। ঠিক কী কারণে এমন হয়ে থাকে?আমরা এই প্রবন্ধে প্রথমেই জেনে নেব দু’জন মহিলার অভিজ্ঞতা, যাঁদের স্বামীরা তাঁদের ঠকিয়েছেন। কেন একটা সুন্দর সম্পর্কে থাকার পরেও মানুষের মধ্য়ে প্রতারণা করার মনোভাব আসে, তা নিয়ে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের বক্তব্য আলোচনা করব। পুরুষদের কি প্রতারণা করার প্রবণতা বেশি? সমীক্ষার রিপোর্টে কী তথ্য উঠে এল, সেই নিয়েও আলোচনা করব। প্রথমেই দু’জন মহিলার অভিজ্ঞতা জেনে নেওয়া যাক।

১/ অভিজ্ঞতা ( বৃষ্টি, ৪২ বছর)  :  আপনার সঙ্গী আপনাকে ঠকানোর পরে তাঁকে খুব সহজেই ছেড়ে চলে যাওয়া সম্ভব হয় না। আমার স্বামীর সঙ্গে কলেজে আলাপ হয়। প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় আমরা একসঙ্গে আছি। সেই সঙ্গী আপনাকে ঠকাচ্ছে এই কথা ভাবতেও কষ্ট হয়।  আমি ওকে আর বিশ্বাস করি না। আমি সম্পর্ক ছেড়ে বেরোতে চাই, কিন্তু ভয় পাই যে আমি একা হয়ে যাব।”

২/ অভিজ্ঞতা  (তনিশা, ৪৪ বছর) : আমার প্রচণ্ড খারাপ লেগেছিল। আমি ওর সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। শুধুমাত্র মেসেজে কথা বলতাম। কারণ সেই মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে আমার বাধত যে আমায় ঠকিয়েছে। তারপর আমরা দুজনেই কাপল থেরাপি নেওয়ার কথা ভাবি। ধীরে ধীরে আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিই। এখন আমরা আগের থেকে ভালো আছি। 

চিকিৎসক দেবাঞ্জন পানের মতে, আসলে মানুষ স্বভাবে বহুগামী(Polygamous)। আদিমযুগে পশুর মতোই আচরণ করত। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর স্বভাবে পরিবর্তন হয়। মানুষের মস্তিষ্ক উন্নত হয়। আমাদের মস্তিষ্কের সামনের অংশে রয়েছে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স। যা আমাদের নীতিবোধকে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে বিচক্ষণ হতে সাহায্য করে। তাই এখন মানুষ সম্পর্কের মূল্যবোধ দিতে শিখেছেন।একজন সঙ্গীর প্রতি লয়্যাল থাকতে শিখেছেন। কিন্তু স্বভাবগত দিক থেকে তো তার কোনও পরিবর্তন হয়নি। একজন মানুষ সারাজীবন এক সঙ্গীর সঙ্গে থাকতে পারেন। কিন্তু বিচক্ষণতার অভাবে যখন তাঁর প্রাকৃতিক চরিত্র তাঁকে ডমিনেট করে, সেই সময়েই অন্য মানুষের প্রতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে যায়। মানুষ সঙ্গীকে ঠকায়। তাই আমি সঙ্গীকে প্রতারণা করব নাকি সম্পর্কে লয়্যাল থাকব, এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকে।চিকিৎসক দেবাঞ্জন পানের মতে, বৈবাহিক বা রোম্যান্টিক সম্পর্ক তিনটি ধাপের মধ্য়ে দিয়ে যায়। প্রথমদিকে একে অপেরর প্রতি দুই সঙ্গীর একটি আকর্ষণ কাজ করে। শারীরিক ও মানসিক পরিতৃপ্তি পান বিপরীতের মানুষের থেকে। এই ধাপে অ্যাড্রিনালিন হরমোন কার্যকরী হয় বেশি। এরপর ধীরে ধীরে সঙ্গীর প্রতি আমাদের চাহিদা তৈরি হয়। তা শারীরিক ও মানসিক হতে পারে। এই সময়ে সঙ্গী যদি আমাদের মন ভালো রাখতে পারেন, তাহলে সঙ্গীর প্রতি আরও বেশি করে আমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। এই ধাপে ডোপামিন হরমোনের কার্যকারিতা থাকে বেশি।তবে সারাজীবন সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য সম্পর্কে এফর্ট দেওয়ার প্রয়োজন অনেক বেশি। এই ধাপে অক্সিটোসিন হরমোন প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। একে অপরের সঙ্গে বাঁধন মজবুত করার জন্য এই হরমোন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ঠিক এই সময়েই আমরা বাঁধন মজবুত করার চেষ্টা করি না। সম্পর্কে শ্রম কম দিই ও তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তির দিকে ছুটি। আমাদের কাছে এখন অপশন অনেক বেশি। কয়েক দশক আগেও মানুষ যেরকম জীবন ভাবতে পারতেন না।২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে সেরকম তথ্যই প্রাথমিকভাবে দেখতে গেলে সেই কথাই সত্যি। ২০১৮ সালে জেনেরাল সোশ্যাল সার্ভে থেকে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সেখানে রিপোর্টে দেখা যায়, বিবাহিত হওয়ার পরেও অন্য মানুষের সঙ্গী শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ১৩ শতাংশ মহিলা।আমরা নিজেদের সম্পর্ক নিজেরাই ঠিক রাখতে পারি। হরমোন ও প্রাকৃতিক স্বভাবগত কারণে বিপরীত বা সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা সঙ্গীর উপর লয়্যাল থাকব কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি নিজেরাই। তাই যে সম্পর্কটা স্বামী ও স্ত্রী মিলে খুব যত্ন করে তৈরি করেছেন, সেই সম্পর্ক যত্ন করে লালন-পালন করুন। তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি না খুঁজে সম্পর্কের গাছকেই সুন্দর করে বাড়তে দিন। সেই গাছই দুঃসময়ে আপনাদের ছায়া দেবে।

 

LEAVE A COMMENT

Comment